রাত্রিকালীন সময়ে কিছু বিশেষ ইবাদত
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থার নাম। তাই এতে জীবনের প্রতিটি
মুহূর্তের দিকনির্দেশনাই দেওয়া হয়েছে।
আমাদের একটু সতর্কতাই পারে দৈনন্দিন কাজগুলোকে নেক আমলে পরিণত
করতে। এরই ধারাবাহিকতায় রাত্রিকালীন কিছু সুন্নাত, আদব তুলে ধরার চেষ্টা
করব ইনশাআল্লাহ।
সন্ধ্যার
আমল : মাগরিবের আজানের সময় হলেই ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখা ও ছোট
বাচ্চাদের বাইরে যেতে বারণ করা উচিত। কেননা তখন জিন জাতি ঘোরাফেরা করে।
(সিহাহ সিত্তাহ)
এমনিভাবে রাতে এশার নামাজ পড়েই শুয়ে পড়া সুন্নাত। তবে এর আগে কিছু এবং
ঘুমাতে যাওয়ার আগেও কিছু আমল রয়েছে। যেমন—ঘুমানোর আগে স্ত্রী-পরিজনের
উপদেশমূলক ঘটনাবলি ও শরিয়তসম্মত কৌতুকপূর্ণ কথাবার্তা শোনানো। (শামায়েলে
তিরমিজি : পৃ. ১৭) আর অহেতুক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা চাই। কেননা এর ফলে
সকালে নামাজ কাজা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
(তিরমিজি : ১/৪২) রাতে
বিসমিল্লাহ বলে দরজা বন্ধ করা এবং বিসমিল্লাহ বলেই হুক লাগানো। (বুখারি :
২/৯৩১) পানির পাত্র, বালতি ইত্যাদি বিসমিল্লাহ বলে ঢেকে রাখা। ঢেকে রাখার
কিছু না থাকলে অন্তত একখণ্ড লাকড়ি হলেও ওপরে দিয়ে রাখা। (বুখারি : ২/৯৩১)
এরপর বিসমিল্লাহ বলে বাতি নিভিয়ে দেবে। (বুখারি : ২/৯৩১) যেসব বস্তু থেকে
অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা থাকে, সেগুলোকে বিসমিল্লাহ বলে নিভিয়ে ফেলবে। (বুখারি
: ২/৯৩১) যেমন—গ্যাসের চুলা ইত্যাদি। তা ছাড়া এর দ্বারা বিপুল পরিমাণ
গ্যাসও অপচয় হয়, যা দেশ ও জাতির কারো জন্যই কল্যাণকর নয়।
ঘুমানোর সময়ের কিছু আমল : অজুর সঙ্গে ঘুমানো। (আবু দাউদ : ১/৬৮৭)
মিসওয়াক করে ঘুমানো। (মিশকাত ১/৪৪) চুল-দাড়ি আঁচড়ানো। (মিশকাত : ২/৩৮৪)
উভয় চোখে তিনবার করে সুরমা লাগানো। (উসওয়ায়ে রাসুলে আকরাম ১১৫) ঘুমানোর
আগে বিছানা ঝেড়ে নেওয়া। (মিশকাত : ১/২০৮) শোয়ার আগে আরামদায়ক পোশাক পরিধান
করা, কেননা রাসুল (সা.) শোয়ার আগে লুঙ্গি পরিধান করতেন এবং জামা খুলে
ঝুলিয়ে রাখতেন, তারপর আরাম করার আগে বিছানা ঝেড়ে নিতেন। তাহাজ্জুদের নিয়তে
ঘুমানো। (নাসায়ি : ১/১৯৯) তাহাজ্জুদের জন্য জায়নামাজ শিয়রে রেখে ঘুমানো
উত্তম। (আল উসওয়াহ : ৫৫৬)
নিদ্রা যাওয়ার আগে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়া এবং বিছানায় শোয়ার পর
আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। বুখারি : (২/৭৫৩) সুরায়ে ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে
ঘুমাবে। (বুখারি : ২/৭৫০) সম্ভব হলে কোরআনে কারিমের ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করে
ঘুমানো। (সুনানে দারেমি : ২/৩৪১) অন্য বর্ণনা মতে, কমপক্ষে কোরআনের ১০টি
আয়াত তেলাওয়াত করার কথা বলা হয়েছে। (দারেমি : ২/৩৪০) মাগরিবের পর সুরায়ে
ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করা এবং ফজরের পর সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করা। (দারেমি :
২/৩৩৬) ঘুমানোর আগে তিনবার ইস্তিগফার অর্থাৎ ‘আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাজি লা
ইলাহা ইল্লা হুআল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহি’ পড়া। (মিশকাত : ১/২২১)
বিছানায় শুয়ে এই দোয়া পড়া ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়াআহ ইয়া’। (বুখারি
২/৯৩৬)
সুবহে সাদেকের আগে ঘুম ভাঙলে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া। (১/১০৯) রাতে যদি
স্বপ্নদোষ কিংবা স্ত্রী সহবাস হয়ে থাকে, তবে সঙ্গে সঙ্গে গোসল করে নেওয়া
উত্তম, অন্যথায় কমপক্ষে সুবহে সাদেকের আগে গোসল করে নিতে হবে। এর বেশি
বিলম্ব করা উচিত নয়। (আবু দাউদ : ১/২৯)
রাতের আদবসমূহে এটিও আছে যে একাধিক ব্যক্তি একই স্থানে ঘুমালে রাতে কোনো
কারণে জাগ্রত হলে বাতি জ্বালানো ইত্যাদি বিষয়ে সতর্ক হওয়া, যাতে অন্যের
ঘুমের ক্ষতি না হয়।
ঘুম থেকে জেগে ওঠার সময়ের সুন্নাত : খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা উচিত। উঠেই
সর্বপ্রথম উভয় হাত দ্বারা মুখমণ্ডল ও চক্ষুদ্বয় মর্দন করা, যাতে ঘুমের রেশ
কেটে যায়। অতঃপর সুরায়ে আলে ইমরানের শেষ ১০ আয়াত তেলাওয়াত করা। (নাসাই : ১
/২) তারপর এই দোয়া পাঠ করবে : ‘আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি আহয়ানা বা’দামা
আমা-তানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। ’ (বুখারি : ২/৯৩৮) এরপর নিদ্রা থেকে জাগ্রত
হয়ে মিসওয়াক করা সুন্নাত। (আবু দাউদ : ১/৮) তারপর তিনবার উভয় হাত কবজি
পর্যন্ত ধৌত করবে। (তিরমিজি : ১/১৩)