সৃজনশীল পদ্ধতি কি? কেন?

 সৃজনশীল পদ্ধতি কি? কেন?

স্ট্যাডি পয়েন্ট বিডি
সৃজনশীল পদ্ধতি কি? কেন?
২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম দুটি বিষয় (বাংলা ও ধর্ম শিক্ষা) সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হয় । বর্তমানে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সকল বিষয়ে এবং এইচএসসিতে আংশিকভাবে সৃজনশীল পদ্ধতি চালু হয়েছে। সৃজনশীল পদ্ধতি সম্পর্কে অভিভাবক, শিক্ষাবিদ এবং সাধারণ জনগণের ব্যাপক অংশের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এই কারণে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান,পরীক্ষা-পদ্ধতি, পাবলিক পরীক্ষার ফল এবং পাস করা শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দিয়ে সহজে সমাজে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা যাচ্ছে।


সৃজনশীল পদ্ধতিতে ৩ ঘণ্টার একটি প্রশ্নপত্রের দুটি অংশ আছে। প্রথম অংশে সৃজনশীলে ৬০ নম্বর এবং দ্বিতীয় অংশে বহুনির্বাচনীতে ৪০ নম্বর। প্রশ্নের উভয় অংশে শুধু মুখস্ত করে উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্র সীমিত। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীকে ভালো করতে হলে পুরো পাঠ্যবই পড়তে হবে এবং বিষয়বস্তু বুঝতে হবে। এ কারণে শিক্ষার্থীকে চিন্তা করতে হবে বেশি, লিখতে হবে কম ।


সুজনশীল অংশে ৯ টির মধ্যে ৬টি কাঠামোবদ্ধ প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। প্রতিটি প্রশ্নের আবার ৪ টি অংশ।


ক) শিক্ষার্থীর স্মরণশক্তি যাচাইয়ের জন্য ‘জ্ঞানমূলক’ প্রশ্ন থাকে। মান-১।

খ) শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবইয়ের কোনো তথ্য ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে কী না, তা যাচাইয়ের জন্য ‘অনুধাবনমূলক’ প্রশ্ন থাকে। মান-২।
 গ) ‘প্রয়োগ’-এটি সৃজনশীল প্রশ্নের ব্যাখ্যামূলক অংশ। এতে শিক্ষার্থী পাঠ্যবইয়ের কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা উদ্দীপকের মধ্যে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে। মান -৩।
ঘ) ‘উচ্চতর দক্ষতা’– এ অংশে শিক্ষার্থী উদ্দীপকের মাধ্যমে পাঠ্যবইয়ের মূল বিষয়বস্তুতে প্রবেশ করবে এবং পাঠ্য বইয়ের একাধিক তথ্য ব্যবহার করে নিজস্ব বিশ্লেষণ উপস্হাপন করবে। মান-৪।

প্রশ্নের প্রথম দুটি (ক ও খ) অংশ শিক্ষার্থী পাঠ্যবই থেকে লিখতে পারে। পরের দুটি (গ ও ঘ) অংশের উত্তর নিজের চিন্তা থেকে লিখতে হয়।


একজন শিক্ষার্থী তার পাঠ্যবইয়ের অধ্যায়গুলো যথাযথভাবে পাঠ করলে সহজে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে। বহুনির্বাচনী নৈর্ব্যাক্তিক অংশে যে যতটি উত্তর শুদ্ধ করতে পারবে সে তত নম্বর পাবে। উত্তরপত্র মূল্যায়নকারী যদি মনে করেন পরীক্ষার্থী প্রতিটি স্তর যথার্থভাবে লিখতে পেরেছে, তাহলে পরীক্ষার্থী পূর্ণ নম্বর পাবে। মূল্যায়নকারীর নিকট উত্তর যথার্থ মনে না হলে আংশিক নম্বর পাবে। উল্লেখ্য, এ কারণে এখন শিক্ষার্থীরা আগের মুখস্ত-নির্ভর পরীক্ষার চাইতে বেশি নম্বর পাচ্ছে এবং বেশি পাস করছে।


এ কারণে এখন শিক্ষার্থীরা আগের মুখস্ত-নির্ভর পরীক্ষার চাইতে বেশি নম্বর পাচ্ছে, বেশি পাস করছে
সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্নপ্রণেতা প্রতিটি প্রশ্নের সঙ্গে মডেল উত্তরপত্র জমা দিয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে তিনি নির্দেশিকা প্রদান করেন কোন প্রশ্নের নম্বর কীভাবে দেওয়া হবে। প্রশ্নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া মডেল উত্তরপত্র এবং নম্বর বিষয়ক নির্দেশিকা বিষয় বিশেষজ্ঞগণ যাচাই-বাছাই করে ঠিক করে দেন। পরীক্ষার পর নমুনা উত্তরপত্র এবং নম্বর সংক্রান্ত নির্দেশিকা ব্যবহার করে প্রধান পরীক্ষকের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষকগণ কিছু নমুনা উত্তরপত্র মূল্যায়ন করেন। প্রত্যেক পরীক্ষক তার বিষয়ে ১০ থেকে ২০ টি উত্তরপত্র মূল্যায়নের মহড়া অংশ নিয়ে নিজের ভুলগুলো শুধরে নেন। এ মূল্যায়ন স্ট্যান্ডার্ড বা মান ধরে পরীক্ষক তার উত্তরপত্রগুলো মূল্যায়ন করে থাকেন।

সৃজনশীল পদ্ধতিতে উক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করায় মূল্যায়নে পুরো কার্যক্রমটি স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য হতে বাধ্য। বর্তমান পদ্ধতি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পরীক্ষক নম্বর দেওয়ার সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, সৃজনশীল পদ্ধতিতে একজন পরীক্ষার্থী জ্ঞানমূলক এবং অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর সহজে দিতে পারে বলে পাশের হার বেড়েছে। অন্যদিকে যারা প্রয়োগ এবং উচ্চতর দক্ষতা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর যথাযথ লিখতে পারে তারা ভালো ফল করতে পারে।

স্বাভাবিকভাবে মেধাবীরাই পরের দুটি প্রশ্নের উত্তর যথাযথভাবে দিতে পারে বলেই তারা ভালো করে। পদ্ধতিগত কারণে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের পুরো প্রক্রিয়ায় শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই। সৃজনশীল পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের চাইতে শিক্ষকদের অধিক সৃজনশীল হতে হয়। যেহেতু সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকের মান, দক্ষতা এবং মেধা সমমানের নয়,সে কারণে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকাই স্বাভাবিক।

SHARE THIS

Author:

Previous Post
Next Post