Homoeopathy Treatment- হোমিও চিকিৎসা একটি নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি।


হোমিও চিকিৎসা একটি নিরাপদ চিকিৎসা পদ্ধতি



হোমিওপ্যাথি ওষুধ কীভাবে কাজ করে?
প্রখ্যাত চিকিৎসাবিজ্ঞানী হোমিওপ্যাথির আবিষ্কারক ডা. সামুয়েল হানেমান (হ্যানিম্যান) বলেছেন, হোমিওপ্যাথি ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ করে। ওষুধ যাতে বেশিসংখ্যক স্নায়ুকে স্পর্শ করে ভালোভাবে কাজ করতে পারে, এ জন্য ওষুধের একটা অণুবটিকাকে পানিতে দ্রবীভূত করে প্রয়োগ করতে হবে। জিহ্বা, মুখ ও পাকস্থলীর স্নায়ুগুলো সহজেই ওষুধের ক্রিয়া গ্রহণ করতে পারে। নাক ও শ্বাসযন্ত্র দ্বারা ঘ্রাণ এবং মুখ দিয়ে আঘ্রাণ নিলেও সংশ্লিষ্ট চামড়ার ওপরের স্নায়ুও এ কাজে সাহায্য করতে পারে, বিশেষত একই ওষুধ যদি মর্দনের সঙ্গে সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবে প্রয়োগ করা হয়। (তথ্য : ১. ডা. সামুয়েল হানেমান- অর্গ্যানন অব মেডিসিন, ষষ্ঠ সংস্করণ, বি, জৈন পাবলিশার্স, ভারত, ১৯৭০; অনুচ্ছেদ ২৪৮, ২৪৯ ও ২৭০)

জীবনীশক্তির কাজ
আমাদের জৈবদেহের সব কাজের ক্ষমতার উৎস হলো জীবনীশক্তি (ঠরঃধষ ঊহবৎমু)। জৈবদেহ জীবনীশক্তির ক্ষমতাবলে জীবনীবল (ঠরঃধষ ঋড়ৎপব) প্রয়োগ করে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন  অনুসারে সুস্থ, অসুস্থ ও আরোগ্যের সময় যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে। (তথ্য : ২. ডা. সামুয়েল হানেমান- অর্গ্যানন অব মেডিসিন, ষষ্ঠ সংস্করণ, বি, জৈন পাবলিশার্স, ভারত, ১৯৭০; অনুচ্ছেদ ৯-১৬)

ওষুধের কাজ
ডা. হানেমান তার বিশ্বখ্যাত 'অর্গ্যানন অব মেডিসিন' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, হোমিওপ্যাথি ওষুধের কাজ দুই ধরনের ১. রোগ সৃষ্টি করা ও ২. রোগ আরোগ্য করা। তিনি তার নিজের ও পঞ্চাশ জন সহযোগীর সুস্থ দেহে প্রায় ১০০টি ওষুধ স্থূলমাত্রায় ও বারবার প্রয়োগ করে পরীক্ষণ করেন। তখন এসব ওষুধের লক্ষণ তাদের ওপর প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো সংগ্রহ করে হোমিওপ্যাথি ম্যাটিরিয়া মেডিকা ও রেপার্টরি পুস্তকগুলোয় লিখে রাখা হয়েছে, যাতে চিকিৎসার সময় ওষুধগুলো ব্যবহার করা যায়। (তথ্য: ৩. ডা. সামুয়েল হানেমান- অর্গ্যানন অব মেডিসিন, ষষ্ঠ সংস্করণ, বি, জৈন পাবলিশার্স, ভারত, ১৯৭০; অনুচ্ছেদ ১২০-১২৫)


রোগ সৃষ্টি করা
এসব পরীক্ষার সময় ওষুধ সেবনের ফলে ওষুধ মুখ গহ্বরের স্নায়ুকে স্পর্শ করে এর অনুভূতি মস্তিষ্কে পেঁৗছে দেয়। সেখান থেকে এর ক্রিয়ার অনুভূতি মন ও দেহে ওষুধগুলোর নির্দিষ্ট ক্রিয়াক্ষেত্রে পেঁৗছে যায় এবং শরীর ও মনে ওষুধের নিজ নিজ লক্ষণ প্রকাশ করে। এ ক্ষেত্রে সুস্থ দেহ জীবনীশক্তির কাজের ক্ষমতাবলে জীবনীবল প্রয়োগ করে জীবনীসূত্র মোতাবেক এ কাজ সম্পন্ন করে। (তথ্য: ৪. ডা. সামুয়েল হানেমান- অর্গ্যানন অব মেডিসিন, ষষ্ঠ সংস্করণ, বি, জৈন পাবলিশার্স, ভারত, ১৯৭০; অনুচ্ছেদ ৯-১৬)
তবে ওষুধের দ্বারা এসব কৃত্রিম রোগলক্ষণ (অর্থাৎ ওষুধের লক্ষণ) প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটো শর্ত কাজ করে ১. জীবনীশক্তির রোগপ্রবণতা ও ২. মন ও দেহের নির্দিষ্ট ক্রিয়াস্থলে ওষুধের নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ লক্ষণ প্রকাশের ক্ষমতা। এমনকি একই ক্রিয়াস্থলে প্রতিটি ওষুধ আলাদা আলাদা লক্ষণ প্রকাশ করে। যে কোনো বাহ্যিক প্রতিক্রিয়ায় সাড়া দেয়া জীবনীশক্তির সহজাত প্রবৃত্তি, একে বলা হয় রোগপ্রবণতা (ঝঁংপবঢ়ঃরনরষরঃু)। প্রত্যেক ব্যক্তির ভেতরে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া গ্রহণ বা বর্জনের ক্ষমতার তারতম্য থাকে। তাই রোগপ্রবণতার পার্থক্যের কারণে সব পরীক্ষকের ওপর যে কোনো ওষুধের সব লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এমনকি প্রকাশিত লক্ষণের গভীরতা ও স্থায়িত্বও সমান থাকে না। তবে ওষুধকে ক্রমান্বয়ে বর্ধিত মাত্রায় প্রয়োগ করতে থাকলে শর্তহীনভাবে সব পরীক্ষকের ভেতরে ওষুধের লক্ষণ প্রকাশ পাবেই। সুতরাং কোনো ওষুধ পরীক্ষণের সময়, বিভিন্ন পরীক্ষকের ওপর কম-বেশি যত লক্ষণই প্রকাশ পাক না কেন, তা সব মিলে ওই ওষুধের লক্ষণ বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ সুস্থ দেহে ওষুধ পরীক্ষণের মাধ্যমে ওষুধের কৃত্রিম রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতা বা ওষুধের লক্ষণ প্রকাশের পরিচয় জানা যায়। কোনো ওষুধকে পুনরায় পরীক্ষণ (জব-চৎড়ারহম) করেও তা পুনঃ প্রমাণিত হয়েছে। ভিয়েনা প্রুভিং সোসাইটি হানেমানের পরীক্ষণ করা ৩০ শক্তির ওষুধগুলো পুনরায় পরীক্ষণ করেও হানেমানের পরীক্ষণের যথার্থতার পুনঃ প্রমাণ পায়। (তথ্য : ৫. ডা. সামুয়েল হানেমান- অর্গ্যানন অব মেডিসিন, ষষ্ঠ সংস্করণ, বি, জৈন পাবলিশার্স, ভারত, ১৯৭০; অনুচ্ছেদ ১২০-১২৫ ও ১৭০)

পরবর্তী সময়ে বহু বিজ্ঞানী হানেমানের পরীক্ষণ করা অনেক ওষুধ দ্বিত্ত-অন্ধ পদ্ধতিতে  পুনরায় পরীক্ষণ করে হানেমানের পরীক্ষণের বৈজ্ঞানিক ভিত্তির প্রমাণ পান। যেমন এ নিয়মে ওয়ালাস বেলেডোনা ৩০ শক্তি ও প্লাসিবো দিয়ে ৪৭ জন পরীক্ষকের ওপর সফল পরীক্ষা চালান। এতে বেলেডোনার কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া যায়।

অন্যদিকে, রোগী চিকিৎসার সময় হানেমান রোগীর রোগলক্ষণের সদৃশ লক্ষণসম্পন্ন ওষুধ সূক্ষ্ম মাত্রায় প্রয়োগ করে রোগীকে আরোগ্যের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৭৯০ সালে আবিষ্কৃত তার এ চিকিৎসা পদ্ধতির নাম হোমিওপ্যাথি (ঐড়সবড়ঢ়ধঃযু)। ওষুধের আরোগ্যকারী ক্রিয়ার ক্ষেত্রেও জীবনীশক্তি, জীবনীবল ও জীবনীসূত্রের আগে বর্ণিত নীতিমালা মোতাবেক স্নায়ুর মাধ্যমে ওষুধ কাজ করে। সদৃশ লক্ষণসম্পন্ন ও রোগশক্তি অপেক্ষা শক্তিশালী ওষুধটি রোগলক্ষণের ক্রিয়ার ক্ষেত্রেই নিজের ক্রিয়া প্রকাশ করে এর সদৃশ কৃত্রিম রোগলক্ষণ উৎপন্ন করে। তখন দুটো সদৃশ রোগ একে-অন্যকে দূর করতে পারে- এ প্রাকৃতিক আরোগ্যনীতি অনুসারে রোগলক্ষণ দূরীভূত হয়ে রোগী আরোগ্য লাভ করে। এর দ্বারা হানেমান আরো প্রমাণ করেন যে কোনো ওষুধ সুস্থ মানুষের ওপর যে রোগলক্ষণ সৃষ্টি করে, তা সদৃশ লক্ষণের রোগীকে আরোগ্য করতে পারে। অর্থাৎ ওষুধের রোগ সৃষ্টিকারী ক্ষমতার মধ্যেই এর রোগ আরোগ্যকারী ক্ষমতা নিহিত। (তথ্য : ৭. ডা. সামুয়েল হানেমান- অর্গ্যানন অব মেডিসিন, ষষ্ঠ সংস্করণ, বি, জৈন পাবলিশার্স, ভারত, ১৯৭০; অনুচ্ছেদ ৯-১৬, ৩০-৩৩, ২৪৬-২৫১ ও ২৮৪-২৮৫)
এইডস, রিউমটয়েড আর্থ্রাইটিস, স্নায়ুশূল, অ্যালার্জি ইত্যাদি রোগে হোমিওপ্যাথি ওষুধ ও প্লাসিবো দিয়ে দ্বিত্ত্ব-অন্ধ পদ্ধতিতে গবেষণা করা হয়। এতে শতকরা ৭৬-৮০ ভাগ ক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি ওষুধের সফলতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অন্য এক গবেষণায়, ৪০ জন মাথাঘোরা ও বিবমিষার রোগীর ওপর গবেষক ক্লৌজেন, বার্গম্যান ও বার্টলি এক গবেষণা চালান। এ রোগীদের লক্ষণানুসারে এব্রাগ্রেসিয়া, ককুলাস, কোনিয়াম ও পেট্রোলিয়াম ওষুধ দেয়া হয়। আধুনিক নিউরো-অটোলজিক্যাল টেকনিক অনুসারে এ গবেষণায় প্রমাণিত হয়, ওষুধগুলোর ক্রিয়াস্থল ব্রেনস্টেম ও মেডুলা অবলংগেটা।

উপসংহার
অতএব, ডা. হানেমান ও তার পরবর্তী গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে যে হোমিওপ্যাথি ওষুধ স্নায়ুর মাধ্যমে কাজ করে। এ ক্ষেত্রে, জীবনীশক্তি জীবের সব ক্ষমতার উৎস এটা উপলব্ধি করে হোমিওপ্যাথিকে যতই চিকিৎসাক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করা যাবে, ততই জনস্বাস্থ্যের কল্যাণ হবে।


পরামর্শদাতা
ডাঃ সেকেন্দার আলী
01717-910891
হ্যানিম্যান হোমিও ফার্মেসী
তিলকপুর নতুন বাজার, তিলকপুর।
ভাইস প্রিন্সিপ্যাল
নওগাঁ হোমিওপ্যাথিক মেডিকাল কলেজ এন্ড হাসপাতাল, নওগাঁ।


SHARE THIS

Author:

Previous Post
Next Post